Friday, August 31, 2007

মৃত্তিকা বুলেটিন ক্রম: ০১; বর্ষ ক্রম:০২




মৃত্তিকা
জাতিতাত্ত্বিক লোকায়ত জ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাগজ
বর্ষক্রম:০২,বুলেটিন ক্রম:০১
বীর শহীদ পীরেন স্নালের মহান আত্মত্যাগের এক বছরে বিশেষ পত্র
প্রকাশকাল: ২০ পৌষ ১৪১১ বঙ্গাব্দ, ৩ জানুয়ারি ২০০৫ খৃষ্টাব্দ।।৩৪৭ শহীদ সালাম বরকত হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা থেকে প্রকাশিত।। বিনিময়: ২ টাকা
সম্পাদনা:জুয়েল বিন জহির, পরাগ রিছিল, দুপুর মিত্র; সহযোদ্ধা: শারমিন শর্মী, জাহানারা খাতুন সীমা, তাসলিমা আক্তার রোমন।

বীর শহীদ পীরেন স্নালের রক্ত বলে যায় নিরন্তর সংগ্রামের কথা



১.শালবন কোচ,বর্মণ, মান্দি জাতির হা.বিমা...

টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে একসময় ছিল শালবনে আচ্ছাদিত মধুপুর গড় এলাকা। এই শালবনে হাজার হাজার বছর ধরে মান্দি, কোচ, বর্মণ প্রভৃতি জাতিসত্ত্বার লোকজন বসবাস করে আসছে। এই শালবনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে তাদের বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় জীবনাচার। শালবন মান্দি জাতির হা.বিমা। এই হা.বিমা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র। বলশাল ব্রিং এর নানান প্রজাতির গাছপালা-তরুলতা, পশুপাখি সব কিছুর সাথেই গড়ে উঠেছে তাদের অকৃত্রিম সখ্যতা। কেননা মান্দিরা বিশ্বাস করে যে, এই ব্রিং এর যত গাছ-পালা, পশু-পাখি সব কিছুই সৃষ্টি হয়েছে মিদ্দি বাগবা-র পবিত্র চিপাংফাক্‌ছা থেকে। একসময় শালবনের ভিতরে নিজস্ব রীতিতে হাবাহু.আ-র মাধ্যমে ঘরে তুলত নানান ফসলাদি। কোন অভাব অনটন তেমন ছিল না। শালবনে বিচরনের ক্ষেত্রে বা ফল-মূল সংগ্রহ বা হাবাহু.আ-র জন্য কারো কাছে কোন অনুমতির প্রয়োজন পড়ত না। কেউ একবার কোন জংলা জমি পরিস্কার করে যদি জুম আবাদ শুরু করত তাতেই ঐ জমির উপর তার অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়ে যেত। অন্য কেউ তখন আর ঐ জমির উপর নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার কোনরূপ চেষ্টা করত না। এটাই ছিল সমাজের নিয়ম, যা বংশপরম্পরায় চলে আসছিল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। কিন্তু এরপর একে একে পাল্টাতে থাকে শালবনের উপর আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকারের ধরন-ধারন। ব্রিটিশ জমিদারি প্রথার মাধ্যমে মধুপুর গড় নাটোরের রাজার অধীনে আসে। নাটোরের রাজার শাসনাধীন হওয়ার পর মান্দিরা শালবনের নিচু জমি নিজেদের নামে রেজিষ্ট্রি করে নিতে এবং উঁচু জমিতে লীজের মাধ্যমে চাষাবাদ করতে পারতো। ১৮৭৮ সালে ধানী জমি ভারতীয় প্রজাসত্ত্ব আইনে নথিভুক্ত করা হয় যার আওতায় বছর বছর তারা নিয়মিত কর প্রদান করে থাকে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুরু হয় নানান প্রকল্প-প্রক্রিয়ায় শালবনেরই সন্তান মান্দি, কোচ, বর্মণদের উচ্ছেদ করার নিত্য নতুন আয়োজন। আর এইসব আয়োজন-ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মান্দি, কোচ, বর্মণেরা লড়ে গেছেন অসীম সাহসিকতায়। নিজ জননী ভূমিকে রক্ষার জন্য সেই ১৯৪৭ সালের পর থেকেই রচনা করে চলেছিল একের পর এক প্রতিরোধের। আর এই প্রতিরোধ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ৩ জানুয়ারি গায়রা গ্রামে বহু যুগের নির্যাতন-নিপীড়নের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ তাদেরকে দাঁড় করিয়েছিলো ইকোপার্কের নামে হা.বিমাকে দেয়াল দিয়ে ঘেরার প্রতিবাদ জানাতে।খা সাংমা,খা মারাক-ধ্বনিতে দ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে, জড়ো হয়েছিল হাজার হাজার মান্দি, কোচ, বর্মণ জাতিসত্ত্বার লোকজন। নিজেদের অধিকার এবং নিজ হা.বিমার সম্মান কে অক্ষুণ্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সমবেত হয়েছিল দেয়াল নির্মাণ রুখে দিতে। সেদিন হাজার হাজার আদিবাসীর বিপ্ল­বী চেতনাকে ম্ল­ান করে দিতে বনরক্ষী ও সরকারি পেটোয়া বাহিনী পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন পীরেন স্নাল; আহত হয়েছিলেন উৎপল নকরেক, এপিল সিমসাং, শ্যামল চিরান ও রীতা নকরেক সহ আরো অনেকেই। এই যে পীরেন স্নালের মৃত্যু বা আরো অনেকের আহত হওয়ার ঘটনা, তা কোন ভাবেই কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শালবনের আদি বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ও শালবনকে ধ্বংস করার জন্য বন বিভাগ বা শাসক গোষ্ঠীর ধারাবাহিক অমানবিক, নিষ্ঠুর ও পৈশাচিক কর্মকাণ্ডের একটা অংশমাত্র।


২.শালবন ধ্বংস এবং আদিবাসী উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার নাম ফরেস্ট এ্যাক্ট, রিজার্ভ ফরেস্ট, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল পার্ক প্রকল্প,তুঁত চাষ, ফায়ারিং রেঞ্জ...

যুগ যুগ ধরে শালবনে বসবাসরত কোচ, মান্দিদের কখনো বনের উপর মালিকানা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন পড়েনি। অন্যভাবে বলা যায় যে, মালিকানা শব্দটির অর্থই ছিল তাদের কাছে অজ্ঞাত। যে শালবনে তাদের জন্ম, বেড়ে উঠা, বনকে ঘিরেই যাদের ধর্ম, আচার, সংস্কৃতি তার আবার মালিকানা কীসের। তারাতো বনের জন্য ক্ষতিকর এমন কোন কাজ কখনো করেনি। বন থেকে যখন থারেং, থা.মান্দি সংগ্রহ করতো তখনতো তারা পুরো গাছটাকেই উপড়ে তুলে ফেলত না; বরং কাঙিখত আলু বা কচু সংগ্রহের পর সেই গাছটি আবার সযত্নে মাটিতে পুঁতে দিতো। বিভিন্ন আমুয়া(পূজো) বা অন্যান্য কাজে যখন ফুল-ফল, লতা-পাতার প্রয়োজন পড়তো তখনতো জঙ্গলের বা গাছের কাছে অনুমতি না নিয়ে তারা একটা জিনিসেও হাত দিতো না। তারাতো বন থেকে কোন জিনিস অবাধে লুটে-পুটে নিয়ে কখনো বাইরে পাচার করেনি। বরং বনের জীববৈচিত্র্য যাতে অক্ষুন্ন থাকে এজন্য মান্দিরা প্রতিবছর বর্ষাকালে পালন করতো আসংদেনা আমুয়া। আমুয়ার দিন খামালের (পুরোহিতের) পিছনে পিছনে সবাই জঙ্গলে প্রবেশ করে একটা জায়গায় পূজোর কৃত্যাদি সম্পন্ন করার পর সেখানে সবাই মিলে রোপন করতো নতুন গাছের চারা। এভাবেই নানান নিজস্ব রীতি-নীতিতে তারা বনকে, বনের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করে আসছিল যুগ যুগ ধরে। বনকে ধ্বংস তো দুরে থাক, বনের সামান্যতম ক্ষতি করাকেও তারা মারাং বা দূষণীয় জ্ঞান করতো। এইছিলো শালবন কে ঘিরে কোচ, মান্দি, বর্মণদের ধ্যান-ধারনা বা বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাসের বিপরীতেই পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মাথায় সরকারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে মধুপুর শালবনের উপর। ১৯৪৯ সালের `East Pakistan Private Forest Act’(Act of 1950) এবং ১৯৫০ সালের `East Pakistan State Acquisition and Tendency Act’ এর অধীনে ‘রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণার মাধ্যমে শালবনকে দখল করা হয়। এরপর বনবিভাগ কর্তৃক শুরু হয় কোচ,মান্দি, বর্মণদের উপর একের পর এক উচ্ছেদ নোটিশ, জবরদখল, লুটপাট, মিথ্যামামলার নানাবিধ খড়গ।

ভারতীয় প্রজাসত্ত্ব আইন রদ এবং এই আইনের আওতাধীন আদিবাসীদের রেজিষ্ট্রিকৃত জমি বাজেয়াপ্ত করার প্রচেষ্টাসহ ১৯৫৬ সালে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের বন সেটেলমেন্ট অফিসার এস. এইচ. কোরেশী উচ্ছেদ নোটিশের ইশতেহার প্রকাশ করেন।

১৯৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভণর আজম খান মধুপুর বনে ৪০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান প্রতিষ্ঠার প্রকাশ্য ঘোষণা করে এবং এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে প্রায় ২১ হাজার একর এলাকায় যেখানে হাজার হাজার মান্দিরা বসবাস করছে সেখানে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়।

১৯৬৮ সালে গভর্ণর ও বনমন্ত্রী কোন রকম ক্ষতিপূরণের আশ্বাস ব্যতিরেকেই চুনিয়া গ্রামের মান্দিদের প্রথম উচ্ছেদ নোটিশ এবং ১৯৬৯ সালে জাতীয় উদ্যান প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক চুনিয়া গ্রামে দ্বিতীয় উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে।

১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে শালবনের বাসিন্দারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকসেনাদের বিরুদ্ধে। হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র, লড়েছিল জীবন বাজি রেখে। শহীদ হয়েছিলেন অনেক আদিবাসী নারী-পুুরুষ। কিন্তু স্বাধীসতা সংগ্রামের পরেও শালবনের আদিবাসীদের উপর রাষ্ট্রীয় আচরনের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। বনের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী আমলের সমস্ত কালাকানুনই থেকে যায় অপরিবর্তিত। ১৯২৭ সালের`The colonial Forest Act’ পাল্টায় না, চরিত্র বদল হয় না বনবিভাগের, বনমন্ত্রীর বা রাষ্ট্রযন্ত্রের। মাঝে মাত্র তিনবছর বাদ দিয়ে ১৯৭৪ সাল থেকেই আবার পুরোদমে শুরু হয়ে যায় বনবাসীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের রকমারি সব কৌশলাদির বহুমাত্রিক প্রয়োগ। মাঝে মধ্যেই নানান অজুহাতে ফলবাগান, ধানীজমি সবকিছুই তছনছ করে দিয়ে যেত বনকর্মকর্তাদের নেতৃত্বে বনরক্ষীরা। বনের অধিবাসীরা স্থানীয় থানায় মামলা করতে গেলেও সেই মামলা গ্রহণ করা হত না।

১৯৭৭ সালে বনবিভাগ কর্তৃক শালবনের ভিতর কৃত্রিম লেক তৈরির নামে কোচ-মান্দিদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া, ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ন্যাশনাল পার্ক প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় হাজার হাজার বছর ধরে বসবাসরত অধিবাসীদের উচ্ছেদ নোটিশ জারি করে। একই বছর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কর্তৃক ভেড়া চড়ানোর নাম করে শালবন এলাকার চাপাইদ গ্রামে আদিবাসীদের ভূমি দখল করে নেয়।

১৯৮১ সালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় বনকর্মকর্তার বিট অফিস প্রতিষ্ঠা ও তুঁত গাছ রোপনের নামে শালবনের মান্দিদের ১০৮ একর জমি দখল করে নেয় বনবিভাগ। আর এই দখল কার্যের জন্য বনবিভাগ প্রায় দুইশত বাঙালি মুসলমানকে জয়নাগাছা, বন্দেরিয়চলা, কেজাই গ্রামে নিয়ে আসে।

১৯৬২ সালের তৎকালীন গভর্ণর আজম খান কর্তৃক ঘোষিত ন্যাশনাল পার্ক প্রকল্পের সার্থক বাস্তবায়ন ঘটে ১৯৮২ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে। সরকারি ভাবেই তখন মধুপুর গড়ের ২০,৮৩৭.২৩ একর বনভূমি নিয়ে মধুপুর জাতীয় উদ্যান ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৯৮৪ সালে আবার শালবন দখল হয় নতুন নামে নতুন ভাবে। শালবনের পরিবেশ-প্রতিবেশের কথা বিন্দুমাত্র না ভেবেই টেলকীপাড়া ও নয়াপাড়া গ্রামে বনকে ধ্বংস করে মান্দিদের নিজ জমিতে বিমান বাহিনীর জন্য ফায়ারিং রেঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়। মান্দিরা সাথে সাথেই এর বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিল তাদের নিয়মতানিত্রক প্রতিরোধ। কিন্তু এই প্রতিরোধে বিন্দুমাত্র কর্ণপাত করেনি বন রক্ষার প্রতিষ্ঠান বনবিভাগ বা রাষ্ট্রযন্ত্র।


৩.শালবন ধ্বংস এবং আদিবাসী উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার নাম রাবার চাষ উন্নয়ন প্রকল্প, উডলট প্রকল্প....

আন্তর্জাতিক সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (Asian Development Bank-ADB) অর্থায়নে দ্বিতীয় রাবার চাষ উন্নয়ন প্রকল্প মধুপুর শালবনে শুরু হয় ১৯৮৭ সালে। শালবনের বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থাকে (Ecological Condition) বিবেচনা না করেই সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক স্বার্থে অবৈজ্ঞানিক ও জীববৈচিত্র্য (Biodiversity) বিধ্বংসী এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই রাবার চাষ প্রকল্পের জন্য ১৫০০০ একর জমি প্রকল্প আওতাধীন ধরা হলেও বনের বাসিন্দাদের বিরোধীতার মুখে ৭০০০একর জমিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। আর এই ৭০০০ একর জমিও দখল করা হয় সেই পুরনো কায়দায় অর্থাৎ মান্দিদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। রাবারের মনোকালচারের জন্য ৭০০০ একর জমি থেকে পুরো শালবন কেটে ধ্বংস করা হয়। মাটি থেকে সমূলে উপড়ে ফেলা হয় শালগাছের কপিছ (Sal coppices), যা ঐ এলাকায় ভবিষ্যতে শালবন সৃষ্টির প্রাকৃতিক সম্ভাবনাকেও স্থায়ী ভাবে ধ্বংস করে দেয়। পরে অবশ্য স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে পরিবেশবাদীরা এ ব্যাপারে সোচ্চার হলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্প বন্ধে বাধ্য হলেও শালবনের যে মারাত্বক ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়।

রাবার চাষ প্রকল্পের দুই বছর না যেতেই আসে পাঁচ বছর মেয়াদী (১৯৮৯-১৯৯৫) থানা বনায়ন ও নার্সারী উন্নয়ন প্রকল্প, যা সোস্যাল ফরেষ্ট্রি (Social Forestry) নামে পরিচিত। এবার সেই একই আন্তর্জাতিক সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (Asian Development Bank-ADB) ৪৬.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প ব্যয়ের ১১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয় শালবন এলাকায় উডলটের পেছনে। মধুপুরের শালবনে এই উডলট প্রকল্পে শতশত একর জমি জোরপূর্বক দখল করে নেওয়া হয়। উডলটের ব্ল­ক তৈরীর জন্য দখলকৃত জমির কপিছ সহ সমস্ত শালগাছ এবং হাজার হাজার প্রজাতির মূল্যবান ঔষধি গাছ সমূলে বিনষ্ট করা হয়। সেখানে লাগানো হয় Eucalyptus spp., Dalbergia sissoo, Leucaena leucocephala, Swietenia macrophylla এবং Cedra toona ইত্যাদি বিদেশি গাছ। উলে­খ্য যে এসমস্ত গাছ সাধারনত মরু (Barren) এলাকায় বনায়নের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়। অথচ আমাদের এখানে হাজার হাজার বছরের পুরোনো প্রাকৃতিক শালবন ধ্বংস করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রেসক্রিপশনে এইসমস্ত গাছ লাগনো হয়েছে। আর এই সমস্ত আয়োজনই যে শালবনকে ধ্বংস এবং শালবনের আদিবাসী কোচ, মান্দি, বর্মণদের বিপন্ন থেকে বিপন্নতর করে দেওয়ার দেশীয়-আন্তর্জাতিক চক্রান্ত তা বলাই বাহুল্য।


৪.শালবন ধ্বংস এবং আদিবাসী উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার নাম ইকোপার্ক প্রকল্প...

৯৭.৩ মিলিয়ন টাকার মধুপুর জাতীয় উদ্যান উন্নয়ন প্রকল্পের (Modhupur National Park Development Project) আওতায় ফরেষ্ট কনজারভেশন ও ইকোটুরিজম স্কীমের সরকারী অনুমোদন লাভ করে ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। পরবর্তীতে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি, পশু-পাখি ও বণ্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল নির্মাণের ভালো ভালো বুলি আওড়ে মধুপুর গড়ের প্রায় ৩ হাজার একর বনভূমি ঘিরে ৭ফুট উচ্চতার ৬১ হাজার ফুট ইটের দেয়াল এবং ভেতরে ১০টি পিকনিক স্পট, ২টি ওয়াচ টাওয়ার, ২টি কালভার্ট, ৩টি কটেজ, জলাধার সহ লেক ৯টি, রেষ্ট হাউজ ৬টি, রাস্তা নির্মাণ ৬টি, বন কর্মীদের ৬টি ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি জালাবাদা, সাধুপাড়া, বেদুরিয়া, কাঁকড়াগুনি, গায়রা গ্রাম গুলোতে দেয়াল নির্মাণের জন্য বনকর্মীরা জড়িপ কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত সেখানকার আদিবাসীরা এই দেয়াল নির্মাণের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানতো না। অথচ এই প্রকল্পাধীন ভূমিতেই রয়েছে হাজার হাজার কোচ, মান্দিদের বসবাস। ইকোপার্কের নামে কোচ, মান্দিদের উচ্ছেদের এটা যে পুরনো উদ্দেশ্যরই নব্য একটি প্রক্রিয়া তা আর বুঝতে বাকি থাকেনা আদিবাসীদের। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে মুক্তাগাছা থানার বিজয়পুর ও সাতারিয়া এলাকায় মান্দি গ্রাম গুলোতে স্থানীয় মান্দিদের তীব্র প্রতিবাদের মুখেও বনবিভাগ প্রথম দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে। মান্দি, কোচ, বর্মণেরা জানে এই ইকোপার্কের দেয়াল নির্মাণের ভয়াবহতা কত মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে তাদের জীবনাচারে। সংঘবদ্ধ হতে থাকে আদিবাসীরা। বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে তাদের দাবিসমূহ বিভিন্ন ভাবে সরকারের সামনে তুলে ধরবার চেষ্টা করেন। আদিবাসীদের আন্দোলনের চাপে তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ ২০০৩ সালের ৪ জুলাই দোখলায় আদিবাসী নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে বসেন। আদিবাসীরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া মন্ত্রীর কাছে পেশ করেন। অফলপ্রসু এক আলোচনার পর সরকারের পক্ষ থেকে আদিবাসী নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যে কমিটি ইকোপার্ক সংক্রান্ত উদ্ভুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে রিপোর্ট পেশ করবে। মূলত এই প্রস্তাব ছিল সরকারের পক্ষ থেকে ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলনকে বানচাল করে দেওয়ার একটা পাঁয়তারা। এই প্রস্তাব পেশ করেই তৎকালীন বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আদিবাসীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে কোন কিছু না বলে চলে যান। পরবর্তীতে বনবিভাগ সরকারের পরিকল্পনা মোতাবেক যারা দীর্ঘদিন ধরে মান্দি, কোচ, বর্মণদের নিয়ে ইকোপার্কের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন সেই সব প্রকৃত নেতাদের বাদ দিয়ে খ্রিস্ট্রীয় মিশন প্রধান ও কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিবর্গের সমন্বেয় পর্যালোচনা কমিটি গঠনের পরিবর্তে মূলত ইকোপার্ক প্রকল্প সুষ্ঠভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে। সরকারের তৈরীকৃত বিশ্বাসঘাতক এই দালাল শ্রেণী এরপর থেকে ইকোপার্কের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য কিছু অকার্যকর মিটিং-সমাবেশের আয়োজন করতে থাকেন। সংগ্রামরত আদিবাসীরা এই চিহ্নিত দালালদের কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে চালিয়ে যেতে থাকে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম, হা.বিমাকে রক্ষা করার সংগ্রাম। ২৩ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে গায়রাতে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় ৩ জানুয়ারি ২০০৪ সালে ইকোপার্ক বিরোধী মিছিলের। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিতেই ৩ জানুয়ারি -০৪ গায়রা গ্রামে সাধুপাড়া, কাকড়াগুনি, জয়নাগাছা, জালাবাদা, বিজয়পুর, সাতারিয়া সহ আশেপাশের গ্রাম থেকে হাজার হাজার আদিবাসী নারী-পুরুষ নিজেদের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে শামিল হয়। খা সাংমা খা মারাক-ধ্বণিতে মুখর হয়ে উঠে পুরো শালবন এলাকা। এদিকে সমাবেশ ও মিছিলের খবর পেয়ে সকাল থেকেই সেখানে সরকারের পক্ষথেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও অস্ত্রধারী বনরক্ষীদের এমনকি ঠিকাদারের ভাড়াটে লোকদেরও মোতায়ন করে রাখা হয়েছিল। সমাবেশ শেষে দুপুর বারোটার দিকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলটি কিছুদুর অগ্রসর হওয়ার পরপরই পুলিশ ও বনরক্ষীদের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু হলে ঘটনা স্থলেই নিহত হন জয়নাগাছা গ্রামের বিশ বছরের যুবক পীরেন স্নাল; গুলিবর্ষণে মারাত্মক আহত হন রবীন সাংমা, উৎপল নকরেক, এপ্রিল সিমসাং, পঞ্চরাজ ঘাগ্রা, রহিলা সিমসাং, শ্যামল সাংমা, রিতা নকরেক সহ প্রায় ২৫জন আদিবাসী শিশু-কিশোর-নারী-পুরুষ। এই ঘটনার পরপরই আদিবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। মাসব্যাপী চলে তাদের তুমুল বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ। এদিকে বনবিভাগ বা সরকার শুধু হত্যা ও আহত করেই থেমে থাকেনি। ৪ জানুয়ারি রাতেই নিহত পীরেন স্নাল ও গুলিতে আহত উৎপল নকরেক, জর্জ নকরেক, শ্যামল সাংমা, মৃদুল সাংমা, হ্যারিসন সাংমা, বিনিয়ান নকরেক সহ অজ্ঞাত প্রায় ছয়শত জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে মধুপুর থানার হাবিলদার বাদী হয়ে। এভাবেই বনবিভাগ বা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলন শুরুর পর থেকে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করে। শুধুমাত্র জুন ২০০৩ - জুলাই ২০০৪ পর্যন্তই আদিবাসী নেতৃবৃন্দসহ নিরীহ অনেকের নামে বনবিভাগ বা সরকার মামলা দায়ের করে মোট একুশটি। এই একুশটি মামলার সবকটিতেই যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন অজয় মৃ, প্রশান্ত মানখিন, পঞ্জরাজ ঘাগ্রা, মালতি নকরেক, স্বপন নকরেক, নেরি দালবত, মাইকেল নকরেক, চলেশ রিছিল প্রমুখ। আর পীরেন হত্যার পর আদিবাসীদের পক্ষ থেকে যে মামলা দয়ের করা হয়েছিল তা উপযুক্ত তথ্য-প্রমান নেই এই অজুহাত দেখিয়ে খারিজ করে দেয় ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত; অথচ গুলিতে গুরুতর আহত অনেকেই হুইল চেয়ারে করে আদালতে গিয়ে সাক্ষী দিয়ে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়,পীরেন স্নাল নিহত হওয়ার পরপরই বনবিভাগ ঘটনার দায়ভার এড়াতে রাতের অন্ধকারে শালবনের বিপুল সংখ্যক গাছ কেটে সরিয়ে নেয়, আর পরবর্তীতে গাছ চুরির মামলা ঠুকে দেয় নিরীহ আদিবাসীদের নামে। এই হচ্ছে বনবিভাগ বা রাষ্ট্র কর্তৃক জীববৈচিত্র্য রক্ষার নমুনা।


৫.খা সাংমা, খা মারাক...

বনবিভিাগ ও রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে এযাবতকালে যতগুলো পরিকল্পনা-প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার কোনটাই যে শালবনকে, শালবনের জীববৈচিত্র্যকে রক্ষার জন্য নেওয়া হয়নি বরং সেখানকার আদিবাসীদের উচ্ছেদের মাধ্যমে শালবনের সম্পদ লুট-পাট করার তা অতি স্পষ্ট। যে বনবিভাগ বনরক্ষার (?) মহান ব্রতে (!) নিয়োজিত সেই বনবিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই কালোবাজারিদের সাথে আতাঁত করে শালবনের সম্পদ পাচার করে আর আদিবাসীদের নামে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে চলে। টেলকী গ্রামের এক সিরিন নকরেকের বিরুদ্ধেই বনবিভাগ মামলা দায়ের করেছে প্রায় অর্ধশতকের মতন। বনের গাছ চুরির অভিযোগে সিরিন নকরেক জেলে থাকাকালীন সময়েও তার বিরুদ্ধে গাছ চুরির নতুন নতুন মামলা হয়। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়, জেলে থাকাকলীন সময়েও একজন লোক কিভাবে বনের গাছ চুরি করতে পারেন ? এর সদুত্তর বনের বাসিন্দারা কখনো পায়নি বনবিভাগের কাছে বা রাষ্ট্রের কোন প্রশাসন যন্ত্রের কাছে। তারপরেও বনের বাসিন্দারা বারবার বনকর্মকর্তাদের গাছ পাচার বন্ধ করতে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছিলেন, চেষ্টা করেছিলেন শালবনের সম্পদ রক্ষা করতে। আর এর জন্য ১০ এপ্রিল ১৯৯৬ সালে জয়নাগাছা গ্রামের বিহেন নকরেককে দিনেদুপুরে জীবন দিতে হয়েছিল বনরক্ষীর গুলিতে। বিহেনের অপরাধ ছিলো ঘটনার দিন বনের ভেতর পাতা কুড়াতে গেলে সে বনবিভাগের গাছ চুরি দেখে ফেলে এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। এরপর উল্টো বনবিভাগের দাযেরকৃত গাছ চুরির মিথ্যা মামলায় আদালত রায় দেয়, বিহেনকে গুলি করা বৈধ হয়েছে কারন সে বনের গাছ চুরি করছিলো। অথচ বন আইনে গাছ চুরি করলেও কাউকে পিছন থেকে গুলি করার নিয়ম নেই। এই হচ্ছে শালবন ও বনের আদিবাসীদের উপর বনবিভাগ বা রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রহসনের বাস্তব প্রতিচিত্র। কিন্তু শালবনের যারা আদিবাসিন্দা, শালবন যাদের জীবন-ধর্ম-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ সেই মান্দি, কোচ, বর্মণেরা কোনভাবেই এই শালবনকে ধ্বংস হতে দিতে পারে না, নিজেদের অস্তিত্ব, জীবন, সংস্কৃতিকে কোন ভাবেই বিলীন হতে দিতে পারে না। আর সেজন্যেই যুগে যুগে তারা লড়াই করে এসেছে সমস্ত ষড়যন্ত্র, কালো আইন, নির্যাতন-নিপীড়ন, মিথ্যা মামলা, উচ্ছেদ আর দেয়াল নির্মাণের বিরুদ্ধে। পীরেন স্নাল সেই সংগ্রামী চেতনাকে ধারন করেই নিজ হা.বিমা ও নিজ জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে নিজের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন নিজ হা.বিমার বুকে। হা.বিমার বুক থেকে পীরেন স্নালের রক্তের যে আহবান ধ্বনিত-প্রতিধ্বণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত সেই আহবানকে কখনো উপেক্ষা করতে পারে না হা.বিমার সন্তানেরা। বিহেন নকরেক, গীদিতা রেমা ও বীর পীরেনের সংগ্রামী চেতনাকে ধারণ করেই হা.বিমার সন্তানেরা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, শালবন তথা হা.বিমাকে রক্ষার জন্য লড়ে যাবে নিরন্তর।

তথ্যসূত্র ঃ
১.Bangladesh Land, Forest and Forest People Editor-Philip Gain Published by- SHED, Dhaka.
২.সংহতি ২০০৪।।সম্পাদক-সঞ্জীব দ্রং।। প্রকাশনায়-বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; বনানী, ঢাকা।
৩. বিপন্ন ভূমিজ, অস্তিত্বের সংকটে আদিবাসী সমাজ, বাংলাদেশ ও পূবৃভারতের প্রতিচিত্র।। সম্পাদনা- মেসবাহ কামাল,আরিফাতুল কিবরিয়া।। আরডিসি, ২০০৩ ,ঢাকা।।
৪.মান্দিরাংনি চিঠি ।। সম্পাদক-প্রশান্ত চিরান।। ত্রয়োদশ বর্ষ-৫ম সংখ্যা,অক্টোবর ২০০৩।। প্রকাশনায়- ফারাকা কালচারাল এসোসিয়েশন।
৫.আচিক।। সম্পাদক-অর্পন যেত্রা।। বর্ষ-২, সংখ্যা-২, ফেব্রুয়ারি-মার্চ-২০০৪।। ঢাকা।
৬. খোলা চোখ।। সম্পাদক- খোকন রিছিল।। প্রকাশনায়- প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ।। ৪৩৪ জগন্নাথ হল , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।। আগস্ট ২০০৩, ঢাকা।
৭.দৈনিক প্রথম আলো (৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১৩, ২৩, ২৭ জানুয়ারি ২০০৪ সংখ্যা), ঢাকা।
৮. দৈনিক ভোরের কাগজ (২৭ জানুয়ারি ২০০৪ সংখ্যা), ঢাকা।
৯.দৈনিক জনকন্ঠ (২৫, ২৭ জানুয়ারি২০০৪ সংখ্যা), ঢাকা।
১০.সাক্ষাতকার-আলবার্ট মানখিন, ইকোপার্ক বিরোধী আন্দোলনের নেতা।



No comments: